Quran translations in many languages

Bengali Quran

Al-Isrâ’

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু

[17:1]

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনিযিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল

[17:2]

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং সেটিকে বনী-ইসরাঈলের জন্যে হেদায়েতে পরিণত করেছি যেতোমরা আমাকে ছাড়া কাউকে কার্যনিবাহী স্থির করো না

[17:3]

তোমরা তাদের সন্তানযাদেরকে আমি নূহের সাথে সওয়ার করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা

[17:4]

আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যেতোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে

[17:5]

অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই প্রথম সময়টি এলতখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধাবান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল।  ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল

[17:6]

অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলামতোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্যকরলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম

[17:7]

তোমরা যদি ভাল করতবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এলতখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলামযাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়

[17:8]

হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ করআমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের জন্যে কয়েদখানা করেছি

[17:9]

এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করেযা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যেতাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে

[17:10]

এবং যারা পরকালে বিশ্বাস করে নাআমি তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি

[17:11]

মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করেসেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে। মানুষ তো খুবই দ্রুততা প্রিয়

[17:12]

আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছিযাতে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পার বছরসমূহের গণনা ও হিসাব এবং আমি সব বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি

[17:13]

আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাবযা সেখোলা অবস্থায় পাবে

[17:14]

পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট

[17:15]

যে কেউ সৎপথে চলেতারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না

[17:16]

যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড়দেই

[17:17]

নূহের পর আমি অনেক উম্মতকে ধ্বংস করেছি। আপনার পালনকর্তাই বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ জানা ও দেখার জন্যে যথেষ্ট

[17:18]

যে কেউ ইহকাল কামনা করেআমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণকরি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে

[17:19]

আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করেএমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃতহয়ে থাকে

[17:20]

এদেরকে এবং ওদেরকে প্রত্যেককে আমি আপনার পালনকর্তার দান পৌছে দেই এবং আপনার পালকর্তার দান অবধারিত

[17:21]

দেখুনআমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্তবায় শ্রেষ্ঠ এবংফযীলতে শ্রেষ্ঠতম

[17:22]

স্থির করো না আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে

[17:23]

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যেতাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়তবে তাদেরকে উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা

[17:24]

তাদের সামনে ভালবাসার সাথেনম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তাতাদের উভয়ের প্রতি রহম করযেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন

[17:25]

তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হওতবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল

[17:26]

আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না

[17:27]

নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ

[17:28]

এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল

[17:29]

তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতিনিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে

[17:30]

নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁরবান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন

[17:31]

দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ

[17:32]

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ

[17:33]

সে প্রাণকে হত্যা করো নাযাকে আল্লাহ হারাম করেছেনকিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়আমিতার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএবসে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত

[17:34]

আরএতিমের মালের কাছেও যেয়ো নাএকমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়াসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

[17:35]

মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তমএর পরিণাম শুভ

[17:36]

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেইতার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কানচক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে

[17:37]

পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমিকখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

[17:38]

এ সবের মধ্যে যেগুলো মন্দকাজসেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়

[17:39]

এটা ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্তযা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন

[17:40]

তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদের জন্যে পুত্র সন্তান নির্ধারিত করেছেন এবং নিজের জন্যে ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেননিশ্চয় তোমরা গুরুতর গর্হিত কথাবার্তা বলছ

[17:41]

আমি এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছিযাতে তারা চিন্তা করে। অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়

[17:42]

বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকততবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত

[17:43]

তিনি নেহায়েত পবিত্র ও মহিমান্বিত এবং তারা যা বলে থাকে তা থেকে বহু উর্ধ্বে

[17:44]

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছুনেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতামহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীলক্ষমাপরায়ণ

[17:45]

যখন আপনি কোরআন পাঠ করেনতখন আমি আপনার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দেই

[17:46]

আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেইযাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেনতখন ও অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়

[17:47]

যখন তারা কান পেতে আপনার কথা শোনেতখন তারা কেন কান পেতে তা শোনেতা আমি ভাল জানি এবং এও জানি গোপনে আলোচনাকালে যখন জালেমরা বলেতোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির অনুসরণ করছ

[17:48]

দেখুনওরা আপনার জন্যে কেমন উপমা দেয়। ওরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। অতএবওরা পথ পেতে পারে না

[17:49]

তারা বলেঃ যখন আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবতখনও কি নতুন করে সৃজিত হয়ে উত্থিত হব?

[17:50]

বলুনঃ তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা

[17:51]

অথবা এমন কোন বস্তুযা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিনতথাপি তারা বলবেঃ আমাদের কে পুর্নবার কে সৃষ্টি করবে। বলুনঃ যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃজন করেছেন। অতঃপর তারা আপনার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবেঃ এটা কবে হবেবলুনঃ হবেসম্ভবতঃ শ্রীঘ্রই

[17:52]

যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেনঅতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। এবং তোমরা অনুমান করবে যেসামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে

[17:53]

আমার বান্দাদেরকে বলে দিনতারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয়শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু

[17:54]

তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন। তিনি যদি চানতোমাদের প্রতি রহমত করবেন কিংবা যদি চানতোমাদের আযাব দিবেন। আমি আপনাকে ওদের সবার তত্ত্বাবধায়ক রূপে প্রেরণ করিনি

[17:55]

আপনার পালনকর্তা তাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেনযারা আকাশসমূহে ও ভুপৃষ্ঠে রয়েছে। আমি তো কতকপয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং দাউদকে যবুর দান করেছি

[17:56]

বলুনঃ আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে করতাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না

[17:57]

যাদেরকে তারা আহবান করেতারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে যেতাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ

[17:58]

এমন কোন জনপদ নেইযাকে আমি কেয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না। এটা তোগ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে

[17:59]

পূর্ববর্তীগণ কতৃêক নিদর্শন অস্বীকার করার ফলেই আমাকে নিদর্শনাবলী প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। আমিতাদেরকে বোঝাবার জন্যে সামুদকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা তার প্রতি জুলুম করেছিল। আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি

[17:60]

এবং স্মরণ করুনআমি আপনাকে বলে দিয়েছিলাম যেআপনার পালনকর্তা মানুষকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং যে দৃশ্য আমি আপনাকে দেখিয়েছি তাও কোরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমি তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি। কিন্তু এতে তাদের অবাধ্যতাই আরও বৃদ্ধি পায়

[17:61]

স্মরণ করযখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা করতখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদায় পড়ে গেলকিন্তু সে বললঃ আমি কি এমন ব্যক্তিকে সেজদা করবযাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?

[17:62]

সে বললঃ দেখুন তোএনা সে ব্যক্তিযাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি আমাকেকেয়ামত দিবস পর্যন্ত সময় দেনতবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব

[17:63]

আল্লাহ বলেনঃ চলে যাঅতঃপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবেজাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপুরশাস্তি

[17:64]

তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়ায দ্বারাস্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়েতাদেরকে আক্রমণ করতাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না

[17:65]

আমার বান্দাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই আপনার পালনকর্তা যথেষ্ট কার্যনির্বাহী

[17:66]

তোমাদের পালনকর্তা তিনিইযিনি তোমাদের জন্যে সমুদ্রে জলযান চালনা করেনযাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষন করতে পারো। নিঃ সন্দেহে তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালূ

[17:67]

যখন সমুদ্রে তোমাদের উপর বিপদ আসেতখন শুধু আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা আহবান করে থাক তাদেরকে তোমরা বিস্মৃত হয়ে যাও। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে স্থলে ভিড়িয়ে উদ্ধার করে নেনতখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ

[17:68]

তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছ যেতিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে কোথাও ভূগর্ভস্থ করবেন না। অথবা তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী ঘুর্ণিঝড় প্রেরণ করবেন নাতখন তোমরা নিজেদের জন্যে কোন কর্মবিধায়ক পাবে না

[17:69]

অথবা তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত যেতিনি তোমাদেরকে আরেকবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন নাঅতঃপর তোমাদের জন্যে মহা ঝটিকা প্রেরণ করবেন নাঅতঃপর অকৃতজ্ঞতার শাস্তিস্বরূপ তোমাদেরকে নিমজ্জত করবেন নাতখন তোমরা আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে সাহায্যকারী কাউকে পাবে না

[17:70]

নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছিআমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছিতাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি

[17:71]

স্মরণ করযেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করবঅতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবেতারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না

[17:72]

যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত

[17:73]

তারা তো আপনাকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছিল যে বিষয় আমি আপনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে যা প্রেরণ করেছি তা থেকে আপনার পদঙ্খলন ঘটানোর জন্যে তারা চুড়ান্ত চেষ্টা করেছেযাতে আপনি আমার প্রতি কিছু মিথ্যা সম্বন্ধযুক্ত করেন। এতে সফল হলে তারা আপনাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নিত

[17:74]

আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন

[17:75]

তখন আমি অবশ্যই আপনাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তির আস্বাদন করাতাম। এ সময় আপনি আমার মোকাবিলায় কোন সাহায্যকারী পেতেন না

[17:76]

তারা তো আপনাকে এ ভুখন্ড থেকে ৎখাত করে দিতে চুড়ান্ত চেষ্টা করেছিল যাতে আপনাকে এখান থেকে বহিস্কার করেদেয়া যায়। তখন তারাও আপনার পর সেখানে অল্প কালই মাত্র টিকে থাকত

[17:77]

আপনার পূর্বে আমি যত রসূল প্রেরণ করেছিতাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি আমার নিয়মের কোন ব্যতিক্রমপাবেন না

[17:78]

সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়

[17:79]

রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন

[17:80]

বলুনঃ হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য

[17:81]

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল

[17:82]

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়

[17:83]

আমি মানুষকে নেয়ামত দান করলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দুরে সরে যায়যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করেতখন সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে

[17:84]

বলুনঃ প্রত্যেকেই নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করে। অতঃপর আপনার পালনকর্তা বিশেষ রূপে জানেনকে সর্বাপেক্ষানির্ভূল পথে আছে

[17:85]

তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকেসামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে

[17:86]

আমি ইচ্ছা করলে আপনার কাছে ওহীর মাধমে যা প্রেরণ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম। অতঃপর আপনি নিজের জন্যে তা আনয়নের ব্যাপারে আমার মোকাবিলায় কোন দায়িত্ব বহনকারী পাবেন না

[17:87]

এ প্রত্যাহার না করা আপনার পালনকর্তার মেহেরবানী। নিশ্চয় আপনার প্রতি তাঁর করুণা বিরাট

[17:88]

বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না

[17:89]

আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার না করেথাকেনি

[17:90]

এবং তারা বলেঃ আমরা কখনও আপনাকে বিশ্বাস করব নাযে পর্যন্ত না আপনি ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের জন্যে একটি ঝরণাপ্রবাহিত করে দিন

[17:91]

অথবা আপনার জন্যে খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবেঅতঃপর আপনি তার মধ্যে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত করেদেবেন

[17:92]

অথবা আপনি যেমন বলে থাকেনতেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন

[17:93]

অথবা আপনার কোন সোনার তৈরী গৃহ হবে অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন এবং আমরা আপনার আকাশে আরোহণকে কখনও বিশ্বাস করবনাযে পর্যন্ত না আপনি অবতীর্ণ করেন আমাদের প্রতি এক গ্রন্থযা আমরা পাঠ করব। বলুনঃ পবিত্র মহান আমার পালনকর্তাএকজন মানবএকজন রসূল বৈ আমি কে?

[17:94]

আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেনতাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখেযখন তাদের নিকট আসে হেদায়েত

[17:95]

বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করততবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকেই তাদের নিকট পয়গাম্বর করে প্রেরণ করতাম

[17:96]

বলুনঃ আমার ও তোমাদের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তো স্বীয় বান্দাদের বিষয়ে খবর রাখেন ও দেখেন

[17:97]

আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেনসেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেনতাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়অন্ধ অবস্থায়মুক অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্যে অগ্নি আরও বৃদ্ধি করে দিব

[17:98]

এটাই তাদের শাস্তি। কারণতারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে এবং বলেছেঃ আমরা যখন অস্থিতে পরিণত ও চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাবতখনও কি আমরা নতুনভাবে সৃজিত হয়ে উত্থিত হব?

[17:99]

তারা কি দেখেনি যেযে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃজিত করেছেনতিনি তাদের মত মানুষও পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষমতিনি তাদের জন্যে স্থির করেছেন একটি নির্দিষ্ট কালএতে কোন সন্দেহ নেইঅতঃপর জালেমরা অস্বীকার ছাড়া কিছু করেনি

[17:100]

বলুনঃ যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভান্ডার তোমাদের হাতে থাকততবে ব্যয়িত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অবশ্যই তাধরে রাখতে। মানুষ তো অতিশয় কৃপণ

[17:101]

আপনি বণী-ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুনআমি মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য নিদর্শন দান করেছি। যখন তিনি তাদের কাছে আগমন করেনফেরাউন তাকে বললঃ হে মূসাআমার ধারনায় তুমি তো জাদুগ্রস্থ

[17:102]

তিনি বললেনঃ তুমি জান যেআসমান ও যমীনের পালনকর্তাই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিলকরেছেন। হে ফেরাউনআমার ধারণায় তুমি ধ্বংস হতে চলেছো

[17:103]

অতঃপর সে বনী ইসরাঈলকে দেশ থেকে উৎখাত করতে চাইলতখন আমি তাকে ও তার সঙ্গীদের সবাইকে নিমজ্জত করে দিলাম

[17:104]

তারপর আমি বনী ইসলাঈলকে বললামঃ এ দেশে তোমরা বসবাস কর। অতঃপর যখন পরকালের ওয়াদা বাস্তবায়িত হবেতখন তোমাদের কে জড়ো করে নিয়ে উপস্থিত হব

[17:105]

আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা ওভয়প্রদর্শক করেই প্রেরণ করেছি

[17:106]

আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছিযাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি

[17:107]

বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য করযারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছেযখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে

[17:108]

এবং বলেঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্রমহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে

[17:109]

তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়। [ Sajdah ]

[17:110]

বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলেযে নামেই আহবান কর না কেনসব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন

[17:111]

বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি না কোন সন্তান রাখেননা তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন নাযে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্নবর্ণনা করতে থাকুন