Quran translations in many languages

Bengali Quran

Ibrâhim

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু

[14:1]

আলিফ-লাম-রাএটি একটি গ্রন্থযা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্তপ্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে

[14:2]

তিনি আল্লাহযিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সবকিছুর মালিক। কাফেরদের জন্যে বিপদ রয়েছেকঠোর আযাব;

[14:3]

যারা পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করেআল্লাহর পথে বাধা দান করে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করেতারাপথ ভুলে দূরে পড়ে আছে

[14:4]

আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছিযাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছাপথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্তপ্রজ্ঞাময়

[14:5]

আমি মূসাকে নিদর্শনাবলী সহ প্রেরণ করেছিলাম যেস্বজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনয়ন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[14:6]

যখন মূসা স্বজাতিকে বললেনঃ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফেরাউনেরসম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দেন। তারা তোমাদেরকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দিততোমাদের ছেলেদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের মেয়েদেরকে জীবিত রাখত। এবং এতেতোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা হয়েছিল

[14:7]

যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যেযদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর

[14:8]

এবং মূসা বললেনঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী করতথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষীযাবতীয় গুনের আধার

[14:9]

তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্ববর্তী কওমে নূহআদ ও সামুদের এবং তাদের পরবর্তীদের খবর পৌছেনিতাদেরবিষয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাদের কাছে তাদের পয়গম্বর প্রমানাদি নিয়ে আগমন করেন। অতঃপর তারা নিজেদের হাত নিজেদের মুখে রেখে দিয়েছে এবং বলেছেযা কিছু সহ তোমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছেআমরা তা মানি না এবং যে পথের দিকে তোমরা আমাদেরকে দাওয়াত দাওসে সম্পর্কে আমাদের মনে সন্দেহ আছেযা আমাদেরকে ৎকন্ঠায় ফেলে রেখেছে

[14:10]

তাদের পয়গম্বরগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছেযিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের স্রষ্টাতিনিতোমাদেরকে আহবান করেন যাতে তোমাদের কিছু গুনাহ ক্ষমা করেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের সময় দেন। তারা বলতঃ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ! তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাওযার এবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত। অতএব তোমরা কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর

[14:11]

তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমারাও তোমাদের মত মানুষকিন্তু আল্লাহ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছাঅনুগ্রহ করেন। আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়ঈমানদারদের আল্লাহর উপর ভরসা করা চাই

[14:12]

আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা না করার কি কারণ থাকতে পারেঅথচ তিনি আমাদেরকে আমাদের পথ বলে দিয়েছেন। তোমরা আমাদেরকে যে পীড়ন করেছতজ্জন্যে আমরা সবর করব। ভরসাকারিগণের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত

[14:13]

কাফেররা পয়গম্বরগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। তখন তাদের কাছে তাদের পালনকর্তা ওহী প্রেরণ করলেন যেআমি জালিমদেরকে অবশ্যই ধ্বংস করে দেব

[14:14]

তাদের পর তোমাদেরকে দেশে আবাদ করব। এটা ঐ ব্যক্তি পায়যে আমার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার আযাবের ওয়াদাকে ভয় করে

[14:15]

পয়গম্বরগণ ফয়সালা চাইতে লাগলেন এবং প্রত্যেক অবাধ্যহঠকারী ব্যর্থ কাম হল

[14:16]

তার পেছনে দোযখ রয়েছে। তাতে পূঁজ মিশানো পানি পান করানো হবে

[14:17]

ঢোক গিলে তা পান করবে। এবং গলার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতি দিক থেকে তার কাছে মৃত্যু আগমন করবে এবং সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব

[14:18]

যারা স্বীয় পালনকর্তার সত্তার অবিশ্বাসী তাদের অবস্থা এই যেতাদের কর্মসমূহ ছাইভস্মের মত যার উপর দিয়ে প্রবল বাতাস বয়ে যায় ধূলিঝড়ের দিন। তাদের উপার্জনের কোন অংশই তাদের করতলগত হবে না এটাই দুরবর্তী পথভ্রষ্টতা

[14:19]

তুমি কি দেখনি যেআল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল যথাবিধি সৃষ্টি করেছেনযদি তিনি ইচ্ছা করেনতবে তোমাদেরকেবিলুপ্তিতে নিয়ে যাবেন এবং নতুন সৃষ্টি আনয়ন করবেন

[14:20]

এটা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়

[14:21]

সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএবতোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কিতারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেনতবে আমরা অবশ্যই তোমাদের কে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে সমান আমাদের রেহাই নেই

[14:22]

যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবেতখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবংআমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিঅতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল নাকিন্তু এতটুকু যেআমি তোমাদেরকে ডেকেছিঅতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমিতোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলেআমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয়যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি

[14:23]

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপণ করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদেরকে এমন উদ্যানে প্রবেশ করানো হবেযার পাদদেশ দিয়ে নির্ঝরিনী সমূহ প্রবাহিত হবে তারা তাতে পালনকর্তার নির্দেশে অনন্তকাল থাকবে যেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম

[14:24]

তুমি কি লক্ষ্য কর নাআল্লাহ তাআলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড়মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত

[14:25]

সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন-যাতে তারা চিন্তা-ভাবনাকরে

[14:26]

এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই

[14:27]

আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছাতা করেন

[14:28]

তুমি কি তাদের কে দেখনিযারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসেরআলয়ে

[14:29]

দোযখেরতারা তাতে প্রবেশ করবে সেটা কতই না মন্দ আবাস

[14:30]

এবং তারা আল্লাহর জন্যে সমকক্ষ স্থির করেছেযাতে তারা তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। বলুনঃ মজা উপভোগ করে নাও অতঃপর তোমাদেরকে অগ্নির দিকেই ফিরে যেতে হবে

[14:31]

আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছেতারা নামায কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ঐদিন আসার আগেযেদিন কোন বেচা কেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই

[14:32]

তিনিই আল্লাহযিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেনযাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন

[14:33]

এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন

[14:34]

যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছতার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারীঅকৃতজ্ঞ

[14:35]

যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তাএ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন

[14:36]

হে পালনকর্তাএরা অনেক মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতএব যে আমার অনুসরণ করেসে আমার এবং কেউ আমার অবাধ্যতা করলে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীলপরম দয়ালু

[14:37]

হে আমাদের পালনকর্তাআমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছিহে আমাদের পালনকর্তাযাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুনসম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে

[14:38]

হে আমাদের পালনকর্তাআপনি তো জানেন আমরা যা কিছু গোপনে করি এবং যা কিছু প্রকাশ্য করি। আল্লাহর কাছে পৃথিবীতে ও আকাশে কোন কিছুই গোপন নয়

[14:39]

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরইযিনি আমাকে এই বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন নিশ্চয় আমার পালনকর্তা দোয়াশ্রবণ করেন

[14:40]

হে আমার পালনকর্তাআমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তাএবং কবুল করুন আমাদের দোয়া

[14:41]

হে আমাদের পালনকর্তাআমাকেআমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুনযেদিন হিসাব কায়েম হবে

[14:42]

জালেমরা যা করেসে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেনযেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে

[14:43]

তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে

[14:44]

মানুষকে ঐ দিনের ভয় প্রদর্শন করুনযেদিন তাদের কাছে আযাব আসবে। তখন জালেমরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তাআমাদেরকে সামান্য মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিনযাতে আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিতে এবং পয়গম্বরগণের অনুসরণ করতে পারি। তোমরা কি ইতোপূর্বে কসম খেতে না যেতোমাদেরকে দুনিয়া থেকে যেতে হবে না?

[14:45]

তোমরা তাদের বাসভূমিতেই বসবাস করতেযারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে এবং তোমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল যেআমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছি এবং আমি তোমাদেরকে ওদের সব কাহিনীই বর্ণনা করেছি

[14:46]

তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের কুটকৌশল পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মত হবে না

[14:47]

অতএব আল্লাহর প্রতি ধারণা করো না যেতিনি রসূলগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালীপ্রতিশোধ গ্রহণকারী

[14:48]

যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরাপরাক্রমশালী এবং আল্লাহর সামনে পেশ হবে

[14:49]

তুমি ঐদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলা বদ্ধ দেখবে

[14:50]

তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে

[14:51]

যাতে আল্লাহ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেন। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী

[14:52]

এটা মানুষের একটি সংবাদনামা এবং যাতে এতদ্বারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যেউপাস্য তিনিই-এককএবং যাতেবুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে